✍️ তালুকদার লাভলী
প্রকাশনায় লোকবাণী টিভি
সহ- সম্পাদক বিপ্লব সরকার
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্প্রতি এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন যা দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা, দলীয় বিভাজন এবং গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর চিন্তার ইঙ্গিত দেয়। তিনি বলেছেন, “সবার মধ্যে যেন ঐক্য থাকে, মুখ দেখাদেখি যেন বন্ধ না হয়”—এই আহ্বান কেবল রাজনৈতিক শিষ্টাচার নয়, বরং একটি সংকটাপন্ন রাষ্ট্রব্যবস্থার জন্য সুস্থ ব্যবস্থাপনার ভিত্তি গঠনের ডাক।
তারেক রহমানের ভাষায় ফুটে উঠেছে রাজনীতিতে নৈতিকতা ও সহনশীলতার অভাব, যা দেশের গণতন্ত্রকে ক্রমাগত সংকুচিত করছে। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, একে অপরের সঙ্গে মুখ দেখাদেখি বন্ধ হলে জাতির মেরুদণ্ড ভেঙে পড়ে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই কথাগুলোর তাৎপর্য অনেক বেশি, কারণ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক অবিশ্বাস, বিদ্বেষ এবং অসহিষ্ণুতা আজ এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে একই টেবিলে বসে আলোচনার সুযোগ দিন দিন সংকীর্ণ হয়ে পড়ছে।
রাজনৈতিক বিভাজনের বিপদ
বাংলাদেশের রাজনীতি বর্তমানে দুই মেরুভিত্তিক বিভাজনে জর্জরিত। শাসক দল এবং বিরোধী দলের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, রাজনৈতিক সৌজন্য এবং সংলাপের সংস্কৃতি প্রায় হারিয়ে গেছে। এর ফলে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল হয়ে পড়ছে এবং জনগণের ভোটাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
তারেক রহমান যখন বলেন, “জাতিকে একটি প্ল্যাটফর্মে ঐক্যবদ্ধ দেখতে চাই”, তখন তিনি কেবল দলের স্বার্থের কথা বলছেন না, বরং একটি বৃহত্তর রাষ্ট্রনৈতিক ধারণা তুলে ধরছেন। এটি এমন একটি রাষ্ট্র কাঠামোর ইঙ্গিত দেয়, যেখানে রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও দলগুলো ন্যূনতম গণতান্ত্রিক চুক্তিতে উপনীত হবে—সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি সম্মান থাকবে, জনগণের মতামতের মূল্যায়ন হবে।
সময়ের দাবি: সংলাপ ও সচেতনতা
তারেক রহমানের বক্তৃতায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি উঠে এসেছে, তা হলো জনগণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং রাজনৈতিক পক্ষগুলোর মধ্যে সংলাপের আহ্বান। একটি রাষ্ট্র কেবল আইন দিয়ে পরিচালিত হয় না; এর মেরুদণ্ড হলো নৈতিকতা, জনসম্পৃক্ততা এবং পারস্পরিক সম্মান। যখন রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরকে দেশদ্রোহী, রাষ্ট্রবিরোধী বা অমানবিক তকমা দেয়, তখন জনগণ বিভ্রান্ত হয় এবং গণতান্ত্রিক বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে।
তিনি বলেছেন, “আমরা যদি অতীত ভুলে ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে না এগোই, তবে বাংলাদেশ বারবার বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।” এই বক্তব্যে রয়েছে রাষ্ট্রনির্মাণে ভবিষ্যতকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির ইঙ্গিত। বর্তমান সময়ের অন্যতম চ্যালেঞ্জ হলো, অতীতের ক্ষতকে অতিক্রম করে একটি অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা।
ভবিষ্যতের বাংলাদেশ ও তরুণদের দায়িত্ব
তারেক রহমানের এই বক্তব্য তরুণদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। যারা আজ রাজনীতিকে ঘৃণার বস্তু মনে করেন, যারা ভাবেন “সব রাজনীতিকই এক”—তাদের জন্য এই আহ্বান নতুন করে ভাবার সুযোগ তৈরি করে। তরুণদের সচেতনতা, অংশগ্রহণ এবং নেতৃত্বই পারে একটি সহনশীল, উদার গণতন্ত্রের ভিত্তি গড়ে তুলতে। এজন্য রাজনীতিতে নৈতিকতা, শুদ্ধতা ও মানবিকতা ফিরিয়ে আনা জরুরি।
তারেক রহমানের সাম্প্রতিক বক্তব্য শুধু একটি দলের বক্তব্য নয়, বরং একটি জাতির সামনে দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক-নৈতিক বার্তা। এটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, মতভেদ থাকবেই, কিন্তু মুখ দেখাদেখি বন্ধ হলে রাষ্ট্র, সমাজ ও মানবতা—সবই বিপর্যস্ত হয়। এখন সময়, অতীতের রক্তাক্ত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামীদিনের জন্য একটি মানবিক, সংলাপভিত্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ গড়ার।
তালুকদার লাভলী
কথাসাহিত্যিক, সমাজমনষ্ক লেখক ও সংস্কৃতি কর্মী।
–