1. nazirhossen6120@gmail.com : দৈনিক লোকবাণী : দৈনিক লোকবাণী
  2. info@www.lokobani.com : দৈনিক লোকবাণী :
শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ০৬:৫১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
বিধবার মেয়ে বগুড়ায় অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় ঘটনায় যেভাবে পুলিশের জালে ধরা পড়লেন তিনজন মণিরামপুরে ছিনতাই হওয়া টাকাসহ ৭ জন আটক তারেক রহমানের স্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে সাতক্ষীরায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের নতুন সদস্যদের পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত কলারোয়া পৌর সদর ঝিকরা ৪ নং ওয়ার্ডে মতবিনিময় ও আহবায়ক কমিটি গঠন প্রশাসন, আইন ও কোর্টের নির্দেশকে অমান্য করে চলেছে ভূমিপিপাস আব্দুল করিম ও জাহাঙ্গীর হোসেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী সমবায় দল সাতক্ষীরা জেলা শাখার ১০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদিত সাতক্ষীরায় পর্নোগ্রাফি মামলার মূল হোতা কাদের মেম্বর র‍্যাবের হাতে গ্রেফতার মায়ের রান্না খাওয়া হলো না সদ্য বিবাহিত নাহিদের

বিধবার মেয়ে

সুলেখা আক্তার
  • প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন, ২০২৫
  • ১০৯ বার পড়া হয়েছে

বিধবার মেয়ে
সুলেখা আক্তার শান্তা

দোলা কথা বলে এত আস্তে যেন তার মুখ থেকে শব্দই বের হয় না। প্রয়োজন না হলে সে কথা বলতেই চায় না। জলি মেয়েকে বলেন, শোন মা, অন্যান্য কাজ, রান্না এগুলো সেরে তুই খেয়ে নিস। আমি কখন আসবো, তা বলতে পারি না।
দোলা অন্য সব কাজ শেষ করে আপন মনে রান্না করছে। রান্নাঘরের চারপাশ কলাপাতার বেড়া দিয়ে ঘেরা। একটু পাশেই তাদের বড় পুকুর। সেখানে অনেকেই গোসল করতে আসে। কে আসলো, কে গেল এসব নিয়ে দোলার কোনো কৌতূহল নেই। কাউকে কিছু জিজ্ঞেসও করে না।
পলাশ প্রায়ই পুকুরে গোসল করতে আসে। আসা যাওয়ার পথে মাঝে মাঝে উঁকি দিয়ে দোলাকে দেখার চেষ্টা করে। একদিন সে দোলার কাছে এসে বলল, তোমাকে খুঁজছিলাম। তোমাকে না দেখে ভাবলাম, আম দুটো কী করব! তোমাদের গাছ থেকে পড়েছে। দোলা চুপ। কোনো কথা বলে না। পলাশ আম দুটি রেখে বলল, এই যে দোলা, আম রেখে গেলাম। দোলা শান্তভাবে উত্তর দিলো, নিয়ে যান। পলাশ মুচকি হেসে বলল, জানো, কেন তোমাদের পুকুরে গোসল করতে আসি? দোলা মাথা নিচু করে রইল। তোমাকে এক নজর দেখার জন্য। আমি তোমাকে ভালোবাসি। দোলা শঙ্কিত হয়ে বলল, আপনি চলে যান। মা যদি দেখে ফেলেন, আমাকে বকবে। পলাশ চলে যায়।

জলি কিছু টাকা জমাচ্ছে মেয়ের বিয়ের জন্য। তিনি বয়ামের মধ্যে টাকা রেখে দেন। একদিন দোলা বলেন, মা, তোমার অনেক কিছু নষ্ট হয়, একটা সিন্দুক কিনো। জলি হাসলেন, নারে মা, সিন্দুক লাগবে না। যেভাবে আছি, সেভাবেই থাকি। কোনোমতে দিনরাত পার করলেই হলো।
পলাশ একদিন পুকুরঘাটে বসে ছিল। গোসল করছিল না, এখান থেকে যাচ্ছিলও না। দোলা জিজ্ঞেস করল। এখানে বসে আছেন কেন?
মনটা খারাপ।
কেন?
মা অসুস্থ। চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা দরকার, কিন্তু নেই। দোলা কিছু না বলে ঘরে গিয়ে বয়ামের টাকা এনে পলাশের হাতে দিলো, এটা দিয়ে চাচি আম্মার চিকিৎসা করান। পরে ফিরিয়ে দিয়েন। পলাশ টাকা নিয়ে চলে গেলো।
জলি বয়াম খুলে দেখেন, টাকা নেই! তিনি চিৎকার করে উঠলেন, এ কী হলো? দোলা এগিয়ে এসে বলল, তাই তো বলছিলাম, একটা সিন্দুক কেনো! জলি মেয়েকে ধমক দিয়ে বললেন যাদের সিন্দুক নেই, তারা কি টাকা ঘরে রাখে না? দোলা খুঁটির সঙ্গে হেলান দিয়ে থাকল। কিন্তু মায়ের আহাজারি দেখে তারও মন খারাপ হয়ে গেল।

প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টি। বৃষ্টিতে ভিজে পলাশ দোলার বাড়ি এলো। দোলা অবাক! এত ঝড়বৃষ্টিতে আপনি? পলাশ একটি ব্যাগ হাতে দিলো, এটা নাও। খুলে দেখো! দোলা ব্যাগ খুলে দেখে, একটা মালা আর একটা শাড়ি। কার জন্য? তোমার জন্য। আমি এগুলো দিয়ে কী করব? পরবে। দোলা ইতস্তত করল, না, মা জানলে রাগ করবে। আপনি চলে যান। মা ও ভাই বাড়ি নেই, তারা এসে আপনাকে দেখলে খারাপ ভাববে। পলাশ অনুরোধ করল, শাড়িটা পরো না দোলা।
দোলা শাড়ি পরে, মালা পরে সামনে আসে।
পলাশ মুগ্ধ হয়ে বলে, বাহ! তোমাকে অপূর্ব লাগছে! তুমি আমার বউ হবে?
দোলা লজ্জায় মাথা নিচু করল। কী যে বলেন না!
তাহলে আজ থেকে তুমি আমার বউ। আমি তোমাকে বউ বলে ডাকবো! তারা দুজন অন্তরঙ্গভাবে আপন মনে সময় কাটায়। পরক্ষণে দোলা বিভ্রান্ত হয়ে বলল, হায় হায়! কী হয়ে গেল? পলাশ বলল, তুমি চিন্তা করোনা, আমি তোমাকে আমার ঘরের বউ করব! দোলা মা ও ভাইয়ের শব্দ শুনে পলাশকে দ্রুত বের করে দিলো। সে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। পলাশ যাওয়ার পর আতঙ্কের ভয় কিছুটা দূর হলো। কিন্তু সে চিন্তিত আজ যেটা হলো, এমনটা হওয়া কি ঠিক হলো?

সময় গড়াতে থাকে। দোলার কিছুই ভালো লাগছিল না। সে বুঝতে পারল—তার গর্ভে এখন সন্তান। কিন্তু কী করবে? পলাশ, তুমি সব সময় প্রেমের কথা বলো, কিন্তু আমাকে তোমার ঘরে তোলার কথা বলো না! পলাশ চুপ থেকে বিয়ে তো আমি তোমাকেই করব। তবে সময় হোক। সময় হবে মানে? দোলা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তোমার সন্তান আমার গর্ভে!
পলাশ চমকে উঠল! বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে তোমার মাকে আমার মায়ের কাছে পাঠাও! দোলা অবাক হয়ে বলল, কেন, পলাশ? তুমি তোমার মাকে আমার মায়ের কাছে পাঠাও! পলাশ কুণ্ঠিত, আমি মায়ের কাছে কিছু বলতে পারব না!
দোলা মাকে পাঠাল। জলি পলাশের মায়ের কাছে গিয়ে মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব দিলো। নাহার চমকে উঠল! মেয়ে কি পানিতে পড়ছে? যে মেয়ে পানিতে পড়ে এমন মেয়েকে আমার ছেলের বউ করব না! জলি নীরবে শুনলেন। কোনো উত্তর দিলেন না। নাহার কঠিন কণ্ঠে বললেন, আপনি বিধবা! বিধবার মেয়েকে আমার ছেলের বউ করাবো না! জলি মাথা উঁচু করে বললেন, আমি বিধবা দেখে আমার মেয়েকে বিয়ে করাবেন না? কিন্তু আপনিও তো বিধবা! নাহার তাচ্ছিল্যের হাসি দিলেন। আমি ছেলের মা। ছেলের মাকে চোখ রাঙিয়ে কথা বলা যায় না! জলি স্থির কণ্ঠে বললেন, তবে মেয়ের মাকে বলা যায়, তাই তো? মেয়ে জন্ম নেয়ই কি শুধু কথা শোনার জন্য? নাহার কিছু না বলে, মুখ ফিরিয়ে নিলেন।
জলি চলে এলেন। দোলা উদ্বিগ্নভাবে জিজ্ঞেস করল, মা, কী বলল?
জলি কপালে হাত রেখে বললেন, বেশরম মেয়ে! মাকে পাঠিয়েছিস বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে? অপমান মুখ বুঝে সহ্য করে আসতে হলো। দোলা স্তব্ধ হয়ে গেল। সে ঘরের খুঁটির সঙ্গে হেলান দিয়ে বসে থাকল।
দোলার গর্ভে সন্তান। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ কথা গ্রামে ছড়িয়ে পড়ল। গ্রামের লোকেরা নানা কথা বলতে লাগল। একদিন দোলা পলাশকে বলল, পলাশ, তুমি আমাকে বিয়ে করো! না হলে এই মুখ আর কাউকে দেখাতে পারব না! পলাশ অস্বস্তি নিয়ে বলল, লোকের মুখ তো আর আটকে রাখা যায় না! ঠিক আছে তা জানি। তবে আমার মা তোমাকে বিয়া করাতে চায় না।
দোলা তীব্র কণ্ঠে বলল, তোমার মা আমাকে বিয়ে করবে না। আমাকে তোমার ঘরের বউ করবে না এ কথা আগে কেন ভাবো নাই? এখন আমার কী হবে? আমার সন্তানের কী হবে? পলাশ দীর্ঘশ্বাস ফেলল। দোলা, আমি কিচ্ছু জানি না। আমার কাছে কোনো উপায় নেই। আমি মায়ের কথার বাইরে যেতে পারব না।
দোলা স্তব্ধ হয়ে গেল। এটাই তোমার কথা?
পলাশ মাথা নিচু করে বলল, হ্যাঁ।

বাবুল ক্রুদ্ধ হয়ে চিৎকার করে উঠল, আমি এই মুখ আর কাউকে দেখাতে পারবো না! তোমার মেয়ে যে ঘটনা ঘটিয়েছে, তা নিয়ে মানুষ কত কী বলছে! সে ছুটে গিয়ে গলায় দড়ি দিতে উদ্যত হলো।
জলি আতঙ্কে চিৎকার করলেন, কে কোথায় আছো, আমার ছেলেকে বাঁচাও! তিনি কান্নায় ভেঙে পড়লেন, বাবুল, বাবা! ফিরে আয়। না হলে আমি মরে যাব! জলি মেয়ে দিকে তাকিয়ে কেঁপে উঠলেন, হায় সর্বনাশী! তোর জন্য আমার ছেলে মরতে বসেছে! আমি শেষ, আমার ছেলে শেষ! গ্রামবাসী ছুটে এসে বাবুলকে বুঝাল। কিন্তু বাবুল কিছুতেই শান্ত হলো না। দোলাদের এই পরিস্থিতি দেখে গ্রামের লোকেরা পলাশকে ধরতে গেল। পলাশ টের পেয়ে পালিয়ে যায়।
দিন মাস যায় পলাশ আর বাড়ি ফিরে না।
দোলা হতবুদ্ধি হয়ে গেল। মা ও ভাইয়ের মুখোমুখি হতে পারছিল না সে। মা মরতে চাইছেন, ভাইও মরতে চাইছে। পলাশও আর কোনো খোঁজ নেয় না। এই পৃথিবীতে তার জন্য কোনো জায়গা নেই। দোলা ভাবে দিন, মাস, বছর পার হলে হয়তো এই কলঙ্ক ভুলে যাবে মানুষ। সে পৃথিবীকে বিদায় জানাল। কিন্তু তাতেই কী? মা, ভাই সমাজের কথা থেকে রেহাই পাবে? হয়তো পাবে, হয়তো পাবে না। কিন্তু মৃত্যু কোনো সমাধানের পথ নয়। দোলার জীবন আমাদের শেখায়, সমাজের অন্যায় ও কুসংস্কারকে ভাঙতে হবে, প্রতিবাদ করতে হবে, ভালোবাসাকে রক্ষা করতে হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট