রিপোর্টার, আব্দুল্লাহ আল মামুন,
বেনাপোল, যশোর প্রতিনিধি
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে শার্শা থানার অন্তর্গত ১১ নং নিজামপুর ইউনিয়নের কেরালখালী–পারিয়ার ঘোপ মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে ১১ নং নিজামপুর ইউনিয়ন বিএনপি আয়োজিত এক অভূতপূর্ব উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যা মুহূর্তের মধ্যেই রূপ নেয় বিশাল জনসভায়। চারদিক থেকে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের ঢল উপচে পড়ে মাঠজুড়ে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যশোর–১ (শার্শা) আসনের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী, সাবেক সংসদ সদস্য ও দলের সাবেক কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক জনাব মফিকুল হাসান তৃপ্তি। বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন নিজামপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম আতা এবং সঞ্চালনা করেন ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আলী। সভায় বক্তব্য রাখেন শার্শা থানা ছাত্রদল নেতা রনি আহমেদ, ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব সুমন কবীর, শার্শা থানা যুবদলের আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান আসাদ, নিজামপুর ইউনিয়ন যুবদল নেতা মোহাম্মদ আলী, থানা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আল মামুন বাবলু, থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক রাকিবুল হাসান রিপন, ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আনসার আলী, যশোর জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও থানা যুবদলের সদস্য সচিব ইমদাদুল হক ইমদাদ, উপজেলা বিএনপির মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা পারুল আক্তার, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সাইদুজ্জামান লালটু, ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম তরফদার, বেনাপোল পৌর বিএনপির সহ-সভাপতি শাহাবুদ্দিন ও সভাপতি নাজিমুদ্দিনসহ আরও বহু নেতা। বক্তারা বলেন, মফিকুল হাসান তৃপ্তি এমপি না হয়েও শার্শা অঞ্চলে যে উন্নয়ন, কর্মসংস্থান ও মানবিক সহায়তা বাস্তবায়ন করেছেন, তা নজিরবিহীন; তার সাংগঠনিক দক্ষতা ও উদারতা তাকে জনগণের অটল আস্থার প্রতীকে পরিণত করেছে। তাই তাকে আবারও বিজয়ী করার আহ্বান জানান তারা।
নিজ বক্তব্যে মফিকুল হাসান তৃপ্তি বলেন, জাতীয়তাবাদী দলকে দুর্বল করার জন্য নানা ষড়যন্ত্র হয়েছে, কিন্তু জনগণ কোন ষড়যন্ত্রই গ্রহণ করেনি। তিনি পরিষ্কার ভাষায় উল্লেখ করেন যে বাংলাদেশের সংবিধানে ‘পিআর’ ছিল না, নেই এবং ভবিষ্যতেও থাকবে না। জামায়াত ইসলামীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, তারা ধর্মকে পুঁজি করে ভুয়া জান্নাতের টিকিট বিক্রি করছে—এটি ধর্মের ব্যবসা, যার পরিণতি আল্লাহর গজব ছাড়া কিছুই নয়। তিনি আরও বলেন, চরমোনাই পীর যিনি দীর্ঘদিন দাবি করেছিলেন যে তিনি জামায়াতের মতাদর্শ ও মওদুদীবাদ মানেন না, আজ তারাই জামায়াতের পাশে দাঁড়িয়েছেন, যা তাদের দ্বিচারিতার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তরুণ প্রজন্মকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ১৭ বছরের দমন-পীড়ন ও ইতিহাস বিকৃতির কারণে অনেকেই বিএনপির অবদান জানে না। জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক ছিলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন এনেছিলেন। গার্মেন্ট শিল্প, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন, খাল খনন কর্মসূচি—সবকিছুই তার যুগান্তকারী উদ্যোগ। ফারাক্কা সমস্যা থেকে দক্ষিণ তালপট্টি পর্যন্ত ভারতকে মোকাবিলায় জিয়াউর রহমান ছিলেন আপসহীন। ইরান–ইরাক যুদ্ধকালীন মুসলিম বিশ্বের ঐক্যে তার উদ্যোগই তাকে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে হত্যার দিকে ঠেলে দেয়। তিনি বেগম খালেদা জিয়ার অবদান স্মরণ করে বলেন, তিনি মেয়েদের শিক্ষাকে ফ্রি করেছেন, বৃত্তির ব্যবস্থা করেছেন, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং দেশের উন্নয়নে অসংখ্য ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এমপি নির্বাচিত হলে তিনি প্রতিশ্রুতি দেন—শার্শার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নতুন ভবন নির্মাণ, এমপিও ভুক্তকরণে সহায়তা, শিক্ষিত তরুণদের উপযুক্ত চাকরি প্রদান, চাকরি না হওয়া পর্যন্ত বেকার ভাতা, মা–বোনদের জন্য প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান, চাঁদাবাজি ও দালালবৃত্তির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থা ও বেনাপোল পোর্টের ডিজিটালাইজেশন। তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন, “আমরা জিয়াউর রহমানের সৈনিক—কাউকে মাথা নত করবো না; সততা ও ন্যায়নীতির পথে থাকলে জনগণই আমাদের শক্তি।”
উপস্থিত ছিলেন শার্শা থানা বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমান, সহ তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আতাউর রহমান আতা, বেনাপোল পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আহাদ, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক মেহারুল্লাহ, পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম শহীদ, জেলা কৃষক দলের সদস্য আলমগীর হোসেন টিপু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম আ: হক, জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি শাহানুর রহমান শাওন, ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি মোহাম্মদ বিপ্লব মন্ডল, শার্শা থানা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক বিপ্লব হোসেন, বেনাপোল পৌর ছাত্রদলের সদস্য সচিব ইশতিয়াক আহমেদ শাওনসহ বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী। বৈঠক শেষে মফিকুল হাসান তৃপ্তি আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান এবং দেশনায়ক তারেক রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন।
বৈঠক শেষে তিনি ১১ নং নিজামপুর ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের বাসাবাড়ি বাজার এলাকায় গিয়ে জনসাধারণের হাতে হাতে নির্বাচনী প্রচারণার লিফলেট বিতরণ করেন এবং ধানের শীষে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান। লিফলেট বিতরণ শেষে তিনি ১১ নং নিজামপুর ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ড বিএনপি'র সদস্য জাহাঙ্গীর কবির যুগলের মাতার কবর জিয়ারত করতে যান।