এমডি রেজওয়ান আলী বিরামপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি-দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ী উপজেলায় সাব্বির হোসেন সবুজ হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে জেলা পুলিশ। ঘটনায় জড়িত প্রধান আসামির স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে মরদেহের বিচ্ছিন্ন মস্তক ও হত্যায় ব্যবহৃত কোদাল ও হাসুয়া উদ্ধার করা হয়েছে।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ খ্রি., ফুলবাড়ী থানার কাজিহাল ইউনিয়নের রশিদপুর গ্রামের একটি ধানক্ষেতের ডোবায় স্থানীয়রা একটি মস্তকবিহীন খণ্ডিত মরদেহ ভাসতে দেখে পুলিশকে খবর দেয়।
ফুলবাড়ী থানা পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে দ্বিখণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করে। পরে পরিবারের সদস্যরা মরদেহের শরীরে থাকা বিশেষ চিহ্ন দেখে নিহত ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত করেন— তিনি রশিদপুর গ্রামের মৃত ইবনে সাউদ সরকারের পুত্র সাব্বির হোসেন সবুজ। পরিবারের সূত্রে জানা যায়,২৩ সেপ্টেম্বর সকাল ১১টায় আটপুকুরহাট ব্যাংকে যাওয়ার কথা বলে সবুজ বাড়ি থেকে বের হন, এরপর তিনি আর ফেরেননি।
খোঁজাখুঁজির পরও তার কোনো সন্ধান না মেলায় পরিবারের পক্ষ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর ফুলবাড়ী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। পরদিন নিহতের ভাই মোঃ সাদেক হাসান সজিব ছয়জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এরপরই দিনাজপুর জেলার সুযোগ্য পুলিশ সুপার জনাব মোঃ মারুফাত হুসাইন মহোদয়ের দিকনির্দেশনায় এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) জনাব মোঃ আনোয়ার হোসেন এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে, ফুলবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জের নেতৃত্বে পুলিশ দ্রুত অভিযানে নামে। অল্প সময়ের মধ্যেই এজাহারনামীয় ৫ (পাঁচ) জন আসামিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর মধ্যে ৬ নং আসামি মোঃ আব্দুর হামেদ (৫৮)-কে তিন দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।জিজ্ঞাসাবাদে আব্দুর হামেদ হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন এবং তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ১৮ অক্টোবর ২০২৫ খ্রি., পুলিশ সুপার মোঃ মারুফাত হুসাইন এর নেতৃত্বে পুলিশ টিম রশিদপুর গ্রামের একটি বরেন্দ্র গভীর নলকূপের পাইপের ভেতর থেকে মরদেহের বিচ্ছিন্ন মস্তক উদ্ধার করে। একইসঙ্গে আসামির নিজ বসতবাড়ী থেকে হত্যায় ব্যবহৃত কোদাল ও হাসুয়া উদ্ধার করা হয়।
🩸 ঘটনাপ্রবাহ:
জানা গেছে, আসামি আব্দুর হামেদ ২০০৫ সাল থেকে নিহত সবুজের বাড়িতে কাজ করতেন এবং তাদের পরিবারের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ খ্রি. সকালে সবুজ তাকে জমিতে আগাছা পরিষ্কার করতে নিয়ে যান। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে কথাকাটাকাটির সৃষ্টি হলে আব্দুর হামেদ রাগের বশে কোদাল দিয়ে সবুজের মাথায় আঘাত করেন, ফলে ঘটনাস্থলেই সবুজ মারা যান। হত্যার পর মরদেহ গোপন করতে হামেদ প্রথমে ঘাস দিয়ে ঢেকে রাখেন, পরে পুকুরে ডুবিয়ে রাখেন। পরবর্তীতে মরদেহটি তিন টুকরো করে এর দুই টুকরা ধানক্ষেতের ডোবায় বস্তায় ভরে পুঁতে রাখেন এবং বিচ্ছিন্ন মস্তক পাশের নলকূপের পাইপের ভেতর লুকিয়ে রাখেন। দিনাজপুর জেলা পুলিশের এমন দ্রুত ও কার্যকর অভিযানে স্থানীয়দের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। জেলা পুলিশ জানিয়েছে, এই মামলায় সকল আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।