মো: সেলিম রেজা বাচ্চু:
আগুনের লেলিহান শিখা, “বাঁচাও, বাঁচাও” চিৎকার, ছেলেহারা মায়ের আর্তনাদ, এতিমের বিলাপ—এটা কোনো সিনেমার দৃশ্য নয়, নির্মম সত্য চিত্র।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা , সিস্টেমের ত্রুটি আর মালিকদের মুনাফালোভী মানসিকতা,রাষ্ট্রের ব্যর্থতা সব মিলে তৈরি গড়ে তুলেছে এক পরিকল্পিত মৃত্যুকূপ। বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড—এই শ্রমিক ভাইবোনেরা আজ অবহেলিত, নির্যাতিত, ন্যায্য মজুরি ও মর্যাদা বঞ্চিত।
মিরপুর রূপনগর, চট্টগ্রাম ইপিজেড, তাজরীন ফ্যাশন, রানা প্লাজা, এফআর টাওয়ার, নিমতলী ট্র্যাজেডি — আগুনের লেলিহান শিখা শুধু স্থান বদলায়, কিন্তু চরিত্র বদলায় না।
একই গল্প—জ্বলন্ত শরীর, নিথর দেহ, শোকসন্তপ্ত পরিবার। মালিকের চোখে শ্রমিক কেবল “উৎপাদনযন্ত্র”। হতাশা কে সাথী করে মৃত্যুর প্রতীক্ষায় থাকে শ্রমিক। হয়তো আগুন জ্বলে উঠলে – সে মুক্তি পাবে।
শ্রমিক মররে তদন্ত কমিটি,শোকসভা হয়। তারপর লাল ফিতার নিচে চাপা পড়ে যায় শ্রমিকের অধিকার । রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন আর আমলাতান্ত্রিক জটিলতার মধ্য দিয়ে – আর কতকাল চলবে তদন্ত?
প্রবাসীরা হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে বছরে ২৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্সে প্রেরণ করেন।
সেই শ্রমিক প্রবাসে নিপীড়িত, প্রতারিত, দালালের ফাঁদে নিঃস্ব,ঋণের ভারে ক্লান্ত হলে হৃদযন্ত্র থেমে যায়। তবেই মেলে তার অনন্তকালের ছুটি। আজও গঠিত হয়নি শ্রমিক সুরক্ষা তহবিল। পুরো মাস ঘাম ঝরিয়ে রাজপথে বেতনের দাবীতে নামতে হয়। শ্রম আইনে শ্রমিকের স্বার্থ উদ্ধার হয় কি?
শ্রমিক মরলে রাষ্ট্র বাঁচে না—কারণ শ্রমিকই রাষ্ট্রের প্রাণ, অর্থনীতির মূল কারিগর। তাহলে প্রশ্ন থেকে যায়—যে আগুনে শ্রমিক পুড়ে ছাই হয়, সেই আগুনে শয়তান কেন পুড়ে না?
শ্রমিকের নিরাপত্তা, ন্যায্য মজুরি ও মানবিক কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
লেখক : প্রতিনিধি, বাংলাদেশ কংগ্রেস। ই-মেইল :dbarta1996@gmail.com