এমডি রেজওয়ান আলী
একটি হৃদয়বিদারক বিষয়,দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের নির্দেশে বিরামপুর উপজেলার দিওড় ইউনিয়নে রোপণ করা হয়েছিল ছয় হাজার চারা গাছ।
কিন্তু আজ (৫ অক্টোবর-২৫) রবিবার
দিওড় ইউনিয়নে রোপণকৃত গাছ গুলো মৃত প্রায়। সেই গাছগুলোর শতকরা ৯০ ভাগই নষ্ট হয়ে গেছে অযত্ন, অবহেলা আর দায়িত্বহীনতার কারণে। এ বছর জেলা প্রশাসকের বিশেষ নির্দেশে এই কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছিল।
লক্ষ্য ছিল—রাস্তার দুই পাশে ছায়া তৈরি,পরিবেশকে সবুজ করা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি রোধ করা।
ফলজ,বনজ ও ঔষধিiপ্রায় ছয় হাজার চারা রোপণ করা হয় উৎসবমুখর পরিবেশে। প্রথম কয়েক সপ্তাহে দেখা গিয়েছিল গাছগুলো বাড়ছে, পাতাগুলো সবুজ,জীবনের ছোঁয়া।
মানুষের মনে জন্ম নেয় আশা — একদিন এই রাস্তাটি ছায়ায় ঢাকা পড়বে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যত্নের অভাবে গাছগুলো মরে যেতে শুরু করে। আজ যদি কেউ সেই রাস্তাগুলোতে হাঁটে,চোখে পড়বে শুকনো কান্ড,পড়ে থাকা গাছের অবশেষ,আর ফাঁকা মাটি।
প্রায় ৯০ ভাগ গাছই আর জীবিত নেই।
এ যেন এক সুন্দর উদ্যোগের করুণ পরিণতি—যেখানে প্রকৃতি হারিয়েছে নিজের রঙ। প্রশ্ন উঠেছে—এই ব্যর্থতার দায় কার? গাছ লাগানো হয়েছে সরকারি অর্থে,কিন্তু রোপণের পর তদারকি ছিল না। কেউ পানি দেয়নি, কেউ আগাছা পরিষ্কার করেনি।
স্থানীয় প্রশাসনও নীরব থেকেছে।
ফলে,জনগণের টাকায় গাছ লাগানো হলেও সেই বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি এখন ব্যর্থতার প্রতীক। একটি পূর্ণবয়স্ক গাছ বছরে প্রায় ১২০ কেজি অক্সিজেন দেয়, কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে এবং বৃষ্টি আহ্বান করে। যদি এই ৬ হাজার গাছ টিকে থাকত, তাহলে আজ দিওড় ইউনিয়নের বাতাস আরও বিশুদ্ধ থাকত,তাপমাত্রা আরও কম হতো। কিন্তু সেই সুযোগ আমরা হারিয়েছি নিজের অবহেলায়। তবুও এখনো সময় আছে। আমরা যদি চাই, এই ব্যর্থতাকে নতুন করে সফলতায় রূপ দিতে পারি। প্রয়োজন—নিয়মিত পর্যবেক্ষণ,দায়িত্ববোধ ও সচেতনতা।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দিয়ে প্রতিটি গাছের দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে।
ইউনিয়ন পরিষদ থেকেও গাছ রক্ষায় ছোট বাজেট নির্ধারণ করা উচিত।
পরিবেশ রক্ষা শুধু সরকারের কাজ নয়—এটি আমাদের সকলের দায়িত্ব।
প্রতিটি গাছ যদি আমরা সন্তানের মতো যত্ন করি,তাহলে প্রকৃতি আমাদেরকে শীতল ছায়া আর জীবন দেবে।
একটি গাছ বাঁচানো মানে একটি প্রাণ রক্ষা করা। দিওড় ইউনিয়নের এই অভিজ্ঞতা আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। আসুন,আমরা সবাই মিলে বলি— “সবুজ হোক আমার গ্রাম,বাঁচুক প্রকৃতি,টিকে থাকুক জীবন।”
আবারও নতুন করে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি হোক,কিন্তু এবার যেন দায়িত্বহীনতা নয়,যত্ন ও ভালোবাসা দিয়ে গাছগুলোকে বাঁচানো হয়।