
মণিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি:
মণিরামপুরের হরিহরনগর ইউনিয়ন ভূমি অফিসটি স্থানীয় একটি দালাল চক্রের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিশেষ করে ওই চক্রের মুল হোতা মিকাইল হোসেন শিশির নামে এক যুবককে টাকার বিনিময়ে খুশি করে ভূমি অফিস থেকে বিভিন্ন সেবা নিতে হচ্ছে এলাকার অধিকাংশ নাগরিকদের। আর এ চক্রের পৃষ্ঠপোষকতা করার অভিযোগ রয়েছে ভূমি কর্মকর্তা নওফিল হোসেনেসর বিরুদ্ধে। এলাকার ভূক্তভোগীদের সাথে আলাপ করে পাওয়া গেছে সব অপকর্মের চালচিত্র। এ ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।
এলাকাবাসী জানাায়, উপজেলার হরিহরনগর ইউনিয়ন ভূমি অফিসটি খাটুরা বাজারের ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে। প্রায় পাঁচ বছর যাবত এ অফিসটির দায়িত্বে রয়েছেন ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা নওফিল হোসেন। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে অফিসটি বর্তমান এলাকার একটি চক্রের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। সরাসরি নাগরিকরা এ অফিস থেকে সেবা পাননা। সেবা নিতে নাগরিকদের যেতে হয় ওই চক্রের মূল হোতা শিশিরের কাছে। অভিযোগ রয়েছে সহকারি ভূমি কর্মকর্তা (নায়েব) নওফিল হোসেনের সাথে যোগসাজসে খাটুরা গ্রামের আবদুল কাদেরের ছেলে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মিকাইল হোসেন শিশিরের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা ওই চক্রকে খুশি (উৎকচ) না করলে নাগরিক সেবা মেলেনা। মিকাইল হোসেন শিশির সরকারি কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী না হলেও তিনি নিজেকে ভূমি অফিসের কম্পিউটার অপারেটর পরিচয় দিয়ে সব সময় অফিসে অবস্থান করেন। আর শিশিরকে এ সুযোগটি করে দিয়েছেন নায়েব নওফিল। অভিযোগ রয়েছে নায়েবের কাছে সরাসরি কোন নাগরিক সেবা পাননা। ফলে বাধ্য হয়ে শিশিরকে খুশি করেই তাদের সেবা পেতে হয়।
মদনপুর গ্রামের কৃষক কিতাব মোড়ল অভিযোগ করেন পাঁচ মাস আগে দুই বিঘা জমির খাজনার জন্য শিশির তার কাছ থেকে ৪৭ হাজার টাকা নেন। কিন্তু আজও তার খাজনার রশিদ দেওয়া হয়নি। একই গ্রামের আবদুল আলিমের অভিযোগ তার আট বিঘা জমির প্রকৃত খাজনা ৯০ হাজার টাকা। কিন্তু শিশির তার কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা নিলেও খাজনার রশিদ দেয়নি। ইব্রাহিম নামে এক কৃষক জানান, তার জমির নাম পত্তন ও খাজনা এবং বিনা মূল্যে আশ্রয়ন প্রকল্পের একটি ঘর দেওয়ার কথা বলে শিশির তার কাছ থেকে আড়াই লাখ টাকা নেন। কিন্তু আজও তার কাজ করে দেওয়া হয়নি। স্থানীয় ৪ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মুনছুর রহমান অভিযোগ করেন, মিকাইল হোসেন শিশির ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা হলেও বর্তমান এলাকার এক বিএনপির নেতার আশ্রয় পেয়ে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। তবে ইউনিয়ন বিএনপির সাধারন সম্পাদক রবিউল ইসলাম জানান, শিশিরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। দুই নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জামাল উদ্দিন অভিযোগ করেন, নায়েবের আশ্রয় পেয়ে শিশির ভূমি অফিসটি জিম্মি করে ফেলেছেন। তিন নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আতিয়ার রহমান জানান, শিশির এলাকার সাধারন নাগরিকদের জিম্মি করে জমি সংক্রান্ত ব্যাপারে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এ ব্যাপারে জানতে মিকাইল হোসেন শিশিরের মোবাইল ফোনে একাধীকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে ইউনিয়ন সহকরি ভূমি কর্মকর্তা নওফিল হোসেন তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, তার কাছে কেউ অভিযোগ করেননি। এ ব্যাপারে পরিত্রান পেতে ইউপি সদস্য মুনছুর আলী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে গত বৃহস্পতিবার লিখিত অভিযোগ করেন। নির্বাহী অফিসার নিশাত তামান্না জানান, এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে কোন ছাড় দেওয়া হবেনা।