ভাঙা স্বপ্নের ছায়া
★★★★★★
সুলেখা আক্তার শান্তা
ফাহিমার চোখে ঘুম ঘুম ভাব। বাসের জানালার পাশে সিটে বসে সে একটু হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে। হঠাৎ হেল্পারের চিৎকারে ঘুম ভাঙে—“কুমিল্লা! কুমিল্লা!” চোখ খুলতেই ফাহিমা দেখে, তার দিকে এক যুবক বারবার তাকাচ্ছে। সে মনে মনে বিরক্ত হয়ে ভাবে, “উফ! ছেলেটা কেন আমার দিকে বারবার তাকাচ্ছে? কী যন্ত্রণা!”
বাস থামে, ফাহিমা ব্যাগ হাতে নেমে পড়ে। ছেলেটি এগিয়ে এসে বলে, “আপনি কোথায় যাবেন?” ফাহিমা কড়া গলায় জবাব দেয়, “কেন?” ছেলেটি হেসে বলে, “না এমনি জিজ্ঞেস করলাম।”
ফাহিমা মনে মনে বলে, “গায়ে পড়ে কথা বলা আমার একদম ভালো লাগে না। মেয়ে মানুষ দেখলেই কথা বলা শুরু করে!” তখনি ছেলেটি বলে, “আপনি কি মনে মনে কিছু ভাবছেন?” ফাহিমা চমকে ওঠে, “না তো! আমি... আমি কিছু ভাবছিলাম, কিন্তু বুঝলো কীভাবে?” ছেলেটি হেসে বলে, “চা খাবেন?” ফাহিমা মাথা নাড়ে, “না, আমার চা খাওয়ার অভ্যাস নেই।” ছেলেটি বলে, “এক কাপ চা খেতে অভ্যাসের দরকার পড়ে না। চলেন না, এক কাপ চা খাই।” ফাহিমা দ্বিধায় পড়ে। রাস্তার পাশে দোকানে বসে চা খাওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। ছেলেটি বলে, “আচ্ছা, ওই যে রেস্টুরেন্ট, চলেন ওখানে বসে খাই।”
অবশেষে ফাহিমা রাজি হয়। তারা রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসে। ছেলেটি বলে, “আমরা তো কেউ কারো পরিচয় জানি না। আমি সিফাত। আপনি?” ফাহিমা উত্তর দেয়, “আমি ফাহিমা। বাড়ি কুমিল্লা।” সিফাত বলে, “আমি সিলেট থেকে এসেছি। এখানে এসেছিলাম এক বন্ধুর বাড়িতে। কিন্তু এখন আর যাব না।” ফাহিমা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “বন্ধুর বাড়ি যাওয়ার জন্য এসেছেন, তাহলে এখন যাবেন না কেন?” সিফাত হালকা হাসি দিয়ে বলে, “এই যে আপনার সঙ্গে দেখা হলো, এখন আর কোথাও যেতে ইচ্ছা করছে না।”
ফাহিমা কপাল কুঁচকে তাকায়। “মানে?”
“আপনাকে আমার ভালো লাগছে। আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই। এখন, এই মুহূর্তে।”
ফাহিমা চমকে ওঠে। “আপনি বিয়ে করতে চান আমাকে? চেনা নাই, জানা নাই!”
সিফাত চোখে দৃঢ়তা এনে বলে, “আপনাকে চেনার দরকার নেই। যা চেনার, চিনে ফেলেছি। চলেন, বিয়ে করি।” ফাহিমা ভাবে, “আমি বুঝলাম না, আমি কার পাল্লায় পড়েছি!” ফাহিমা বলে, “আপনি কী বলছেন, বুঝে বলছেন?” সিফাত মাথা নেড়ে বলে, “হ্যাঁ। আমার উপর বিশ্বাস রাখতে পারেন। আর বিশ্বাসের অমর্যাদা হবে না।”
ফাহিমা একটু থেমে বলে, “আমরা তো কেউ কাউকে চিনি না।” সিফাত বলে, “কত মানুষ তো কত মানুষকে চেনে, কই সবার সঙ্গে সবার সম্পর্ক হয় না। সম্পর্ক হয় যখন মন চেনে। আমি মন দিয়ে আপনাকে চিনেছি।” ফাহিমা কিছু বলার আগেই সিফাত তাকে নিয়ে কাজী অফিসে যায়। বিয়ে সম্পন্ন হয়।
সিফাত ফাহিমাকে নিয়ে তার বাড়িতে আসে। দরজায় দাঁড়িয়ে সিফাতের মা রেহেনা, চোখ বড় করে জিজ্ঞেস করেন, “কে এই মেয়ে?”
সিফাত শান্ত গলায় বলে, “মা, ও আমার স্ত্রী।
রেহেনা মুখ ঘুরিয়ে বলেন, “আমি কোনো কথা বলতে চাই না। যে দিক দিয়ে এসেছো, সেদিক দিয়েই ফিরে যাও।”
সিফাত অনুনয় করে, “মা, একটু শুনো…”।
“মা, মা বলে কিছু হবে না। বের হবে কি হবে না, সেটা বলো?”
সিফাত কিংকর্তব্যবিমূঢ়। ফাহিমা ভয়ে কেঁপে উঠছে। সে অসহায় চোখে সিফাতের দিকে তাকায়।
সিফাত কিছু সময় চুপ থেকে ফাহিমার হাত ধরে বলে, “চলো, এখানে আমাদের জায়গা নেই।” দুজনেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে। ফাহিমার চোখে জল, মুখে কোনো শব্দ নেই। সিফাতের মুখে দৃঢ়তা, কিন্তু মনে অজানা ভয়। ফাহিমা সিফাতকে বলল, “চলো, এবার আমাদের বাড়ি যাই।” দুজনেই পৌঁছায় ফাহিমার পৈতৃক বাড়িতে। দরজায় দাঁড়িয়ে ফাহিমা বলে, “বাবা।” বাবা বলতেই। আব্দুল মুন্সি, ফাহিমার বাবা, চোখ রাঙিয়ে বলেন, “যে মেয়ে নিজের বিয়ের সিদ্ধান্ত নিজে নেয়, যার লজ্জা-ভয় বলতে কিছু নেই, সে আমার মেয়ে হতে পারে না। তুমি আমার চোখের সামনে থেকে চলে যাও।” ফাহিমা স্তব্ধ। শব্দ নেই। সিফাত তার হাত ধরে বলে, “চলো, এখানে আমাদের ঠাঁই নেই।”
ফাহিমা ফিসফিস করে বলে, “এখন আমরা কোথায় যাব?”
সিফাত বলে, “ঢাকায় আমার এক বন্ধু আছে। আপাতত ওর বাসায় উঠি।” তারা ঢাকায় বন্ধুর বাসায় ওঠে। নতুন জীবন শুরু হয়। দুজনেই চাকরির জন্য চেষ্টা করতে থাকে। একদিন, একই অফিসে ইন্টারভিউ দিতে যায় তারা। ফাহিমার চাকরি হয়। সিফাতের হয় না। ফাহিমা হাসিমুখে বলে, “যাক, এবার একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নেওয়া যাবে।” সিফাত চুপ, কিন্তু মুখে হাসি ধরে রাখে। তার চোখে তখনও ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা, কিন্তু ফাহিমার পাশে থাকার দৃঢ়তা।
এক সন্ধ্যায়, সিফাতের বন্ধু আলিম ফাহিমার দিকে তাকিয়ে বলল, “ফাহিমা, তুমি ঠিক আছো?”
ফাহিমা শান্ত গলায় উত্তর দিল, “হ্যাঁ, আমি ঠিক আছি।” আলিম একটু থেমে বলল, “আমার তো মনে হয় না তুমি ঠিক আছো। যদি ঠিক থাকতে, তাহলে আমার তোমার দিকে এতটা টান অনুভব হতো না। আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই!” ফাহিমা চোখ বড় করে তাকিয়ে বলল, “আপনি কী বলছেন বুঝে বলছেন? আমি আপনার বন্ধুর স্ত্রী!” আলিম মাথা নিচু করে বলল, “জানি। কিন্তু তুমি তো এখন একা। সিফাতের দায়িত্বহীনতা, সংসারের চাপ সবকিছু দেখে মনে হয় তুমি একজন ভালো সঙ্গীর আশা করো।” ফাহিমা চোখে কঠোরতা এনে বলল, “আপনি আমাদের বিপদের সময় আশ্রয় দিয়েছেন, তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। আমি চাই আপনি এখানেই থেমে যান।”
আলিম বলল, “একবার ভেবে দেখো?” ফাহিমা দৃঢ় গলায় বলল, “ভেবে দেখার কিছু নেই। আপনি সীমা অতিক্রম করছেন। আমি সিফাতের স্ত্রী, এবং সেই পরিচয় আমার আত্মসম্মানের অংশ। আপনি আমাদের সাহায্য করেছেন তার জন্য কৃতজ্ঞ। কিন্তু আপনার এমন প্রস্তাব আশা করি নাই।
আলিম চুপ হয়ে যায়। ফাহিমা নিজের ঘরে ফিরে আসে, মনে মনে ভাবে, “সংসার শুধু ভালোবাসা নয়, সম্মান আর সীমারেখা রক্ষা করাও এক বড় দায়িত্ব।”
ফাহিমা সিফাতকে দৃঢ় গলায় বলল, “সিফাত, আমরা আর এখানে থাকব না।” সিফাত একটু থেমে বলল, “ঠিক আছে, একটা ভালো বাসা খুঁজে পেলে চলে যাব।” ফাহিমা চোখে ক্লান্তি নিয়ে বলল, “না, আমরা যত তাড়াতাড়ি যেতে পারি, ততই ভালো।”
“কেন? এত তাড়া করছো কেন?”
“না, এমনি... কিছু জায়গা থাকে, যেখানে থাকা মানে নিজেকে হারিয়ে ফেলা।” সিফাত আর কিছু না বলে বাসা খুঁজে বের করে। তারা নতুন বাসায় উঠে পড়ে।
সম্পর্কের ছায়া ফাহিমাকে তাড়া করে। সে শ্বশুরবাড়ি যায় না, কিন্তু শাশুড়ি রেহেনার জন্য নিয়মিত উপহার পাঠায় শাড়ি, মিষ্টি, ওষুধ, প্রয়োজনীয় জিনিস। ফাহিমা বলে, “যে আমাকে মেনে নেয়নি, তাকেই আমি ভালোবাসি। কারণ তিনি আমার স্বামীর মা।”
রেহেনা সবকিছু গ্রহণ করেন, কিন্তু মুখে একবারও বলেন না, “তুমি আমার পুত্রবধূ।” তিনি ভাবেন, “আমার ছেলেকে আমি নিজে পছন্দ করে বিয়ে করাবো। কোথাকার কোন মেয়ে এসে আমার ছেলের জীবন দখল করে নেবে, তা হতে পারে না।”
ফাহিমার ভালোবাসা একতরফা, তার সম্মান একপাক্ষিক। তবুও সে থেমে যায় না। সে বিশ্বাস করে, “ভালোবাসা মানে শুধু গ্রহণ নয়, কখনো কখনো নিঃশব্দে দেওয়া।”
ফাহিমা এখন দুই সন্তানের জননী। বিয়ের পর থেকে সে চাকরি করে সংসার চালিয়ে আসছে। সিফাত বহু জায়গায় চাকরির জন্য চেষ্টা করেছে, কিন্তু কোথাও সফল হয়নি। শেষে একদিন সে হাল ছেড়ে দিয়ে বলে, “আমি আর চেষ্টা করব না।” ফাহিমা তাকে সান্ত্বনা দেয়, “আমার তো চাকরি আছে। চলছে তো।” সিফাত কষ্ট গোপন করে বলে, “যেখানে তুমি ঘরে থাকবা, আমি চাকরি করব। কিন্তু এখন তোমাকে ঘর, বাহির সব সামলাতে হচ্ছে। আমার তাতে খুব খারাপ লাগছে।” ফাহিমা হেসে বলে, “শোনো, আমার তাতে সমস্যা হয় না। বাচ্চাদের খাবার রেডি করে রেখে যাচ্ছি। গরম করে খাওয়ালে হবে। অফিসে যাচ্ছি।” “আচ্ছা, সাবধানে যেও।”
রেহেনা, সিফাতের মা, ছেলেকে খবর পাঠান, তাড়াতাড়ি যাওয়ার জন্য।” সিফাত দ্বিধায় পড়ে যায়। “ছোট দুই সন্তান রেখে কীভাবে যাব?” সে ফাহিমাকে জানায়, “মা ডেকেছেন। হয়তো জরুরি কিছু।” ফাহিমা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে, “ঠিক আছে, তুমি যাও। নিশ্চয়ই জরুরি কিছু হবে। যেয়ে দেখো।”
সিফাত ফাহিমার চোখে তাকায়। সেই চোখে ক্লান্তি, বিশ্বাস, আর অজানা আশঙ্কা। এই যাত্রা শুধু মায়ের ডাকে সাড়া নয় এটা হতে পারে তাদের জীবনের মোড় ঘোরানো এক অধ্যায়।
সিফাত বাড়িতে ফিরে দেখে, ঘরে বধূ সাজে বসে আছে সায়মা। সে বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করে, “মা, এটা কার বিয়ের আয়োজন?”
রেহেনা মুখে কঠোরতা এনে বলেন, “তোর!”
“মা, কী বলছো? আমি বিবাহিত!”
রেহেনা গর্জে ওঠে, “আমি যা বলি, তা-ই হয়। তুই আমার কথা শুনতে পারছিস?” সিফাত স্তব্ধ। রেহেনা চোখ রাঙিয়ে বলেন, “তোর ফুফুর মেয়ে সায়মার সঙ্গে তোর বিয়ে ঠিক করে রেখেছি অনেক আগেই। এবার আমার আশা পূরণ হবে। আমি কথা দিয়েছি, সায়মাকে ঘরের বউ করব, বউ করবই।” সিফাত প্রতিবাদ করে, “মা, আমি বিবাহিত, আমার সন্তান আছে!” রেহেনা মাথা উঁচু করে বলেন, “আমার এককথা, এক কাজ। যা বলি, তাই করি। তুই যদি এই বিয়ে না করিস, তাহলে আমার মরা মুখ দেখবি!” তিনি বিষের শিশি তুলে ধরে বলেন, “এই দেখ! আমি মরব, তুই দেখবি?”
সিফাত ভয়ে, দ্বিধায়, মানসিক চাপে ভেঙে পড়ে। সে ফাহিমাকে ফোন করে, “ফাহিমা, সব শেষ হতে যাচ্ছে…”!
ফাহিমা চমকে ওঠে, “কী বলছো তুমি?”
রেহেনা ফোন কেড়ে নিয়ে বলেন, “বিয়ের আগে তোমার কারো সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হবে না।” সিফাতের বিয়ে হয় সায়মার সঙ্গে। বিয়ের মঞ্চে তার মুখে হাসি নেই, চোখে অনুতাপ। তার হৃদয়ে তখন শুধু ফাহিমা আর দুই সন্তান।
স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের খবর শুনে ফাহিমা নিঃশব্দে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। চোখে অন্ধকার, মনে একটাই প্রশ্ন “আমার সন্তানদের কী হবে?” “আমার শাশুড়ির জিদ আমার সংসারটা শেষ করে দিলো। আমি সতীন নিয়ে সংসার করব না। আমি ডিভোর্স দেব।” সে আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করে, প্রস্তুতি নেয়। সিফাত আসে। চোখে অনুতাপ, মুখে কাঁপা কাঁপা স্বর, “ফাহিমা, আমি তোমাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছি। তুমি আমাকে ডিভোর্স দিও না। আমাদের সন্তানদের কথা একবার ভাবো।”
ফাহিমা চোখে জল নিয়ে বলে, “যে শাশুড়িকে আমি মায়ের মতো জানতাম, তিনি কীভাবে পারলেন এমনটা করতে? আমি তার অমতে বিয়ে করেছি, কিন্তু কখনো অসম্মান করিনি।” “নিজেকে সবসময় অপরাধী মনে করেছি! নিজে চাকরি করে সংসার চালিয়েছি। তুমি বাড়ি তুলতে পারোনি, তাও মেনে নিয়েছি।” সিফাত চুপ। তার চোখে তখন শুধুই অনুশোচনা। ঠিক সেই সময় দরজায় কড়া নাড়ে সায়মা। ফাহিমা দরজা খুলতেই সায়মা ঘরে ঢুকে চিৎকার করে ওঠে, সে ঘরের জিনিসপত্র ছুঁড়ে ফেলে, চিল্লায়! ফাহিমাকে বলে “তুমি আমার স্বামীর প্রথম স্ত্রী? আমি দ্বিতীয়! এখন এই ঘরে আমি থাকব, তুমি নয়!”
ফাহিমা স্থির চোখে তাকিয়ে থাকে। তার চোখে তখন আর ভয় নেই, আছে এক অদম্য শক্তি।
সায়মা সিফাতকে বলে, “চলো, এখনই বাড়ি যাবে। আমি তোমার স্ত্রী, আমার শুধু অধিকার আছে।” অন্য কারো নয়।
সিফাত বাধ্য হয়ে যায়। সায়মা বলে, ফাহিমাকে ডিভোর্স দেবে!”
সিফাত দৃঢ়ভাবে বলে, “আমি কিছুতেই ফাহিমাকে ডিভোর্স দেব না। সে আমার সন্তানের মা, আমার ভালোবাসা।”
সায়মা রেগে গিয়ে নিজের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। ভেতর থেকে চিৎকার করে ওঠে, “আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী থাকবে তুমি! আমি নিজেকে শেষ করে দেব!” সিফাত দরজায় ধাক্কা দিয়ে বলে, “সায়মা, দরজা খোলো! এমন কিছু করো না!”
সায়মা দরজা খুলে বলে, “আমার চাওয়া পূরণ করো। এখনই, এই মুহূর্তে!” সিফাত ভেঙে পড়ে। তার ফাহিমা আর সন্তানের কথা মনে পড়ে। সিফাতের চোখে জল, মুখে অসহায়তা। সে ডিভোর্সের কাগজে সই করে দেয়। “নেও, হয়ে গেল তোমাদের চাওয়া পূরণ। ভাসিয়ে দিলাম আমার ছেলে-মেয়েকে। তারা আর পাবে না একসাথে বাবা-মায়ের আদর, ভালোবাসা।”
ফাহিমা ডিভোর্সের কাগজ হাতে নিয়ে নিঃশব্দে বসে থাকে। তার চোখে জল, কিন্তু সেই জল দুর্বলতার নয়, প্রতিজ্ঞার। সে দুই সন্তানকে বুকে জড়িয়ে বলে, “আমি কাঁদবো না এমন মানুষের জন্য, আমি তার জন্য ভেঙে ও পড়ব না।” তার কণ্ঠে দৃঢ়তা, চোখে অগ্নি। “আমার জগৎ, আমার দুনিয়া এখন শুধু আমার ছেলে-মেয়ে। ওদের জন্যই আমি বাঁচবো, ওদের জন্যই আমি গড়বো।”
সে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখে। “যেখানে আমি ভেঙে পড়েছি, সেখান থেকেই আমি নিজেকে গড়বো। আমি হারব না হার মানি না!”
.