সহকারী অধ্যাপক, মোঃ নূরুল হক, মণিরামপুর (যশোর):
‘তোরা যে-যা বলিস ভাই, আমার সোনার হরিণ চাই’-বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জনপ্রিয় এই গানের কথা গুলো দিয়েই আজকের লেখাটি। লেখাটি পড়ে অনেকেই অসন্তুষ্ট হবেন এটা স্বাভাবিক।
৮৯, যশোর-৫ (মণিরামপুর) নির্বাচনী এলাকার এলাকাবাসি এবং বিশেষ করে ভোটারদেরকে কিছুটা হলেও সর্তক করা বা বা অযাচিত পরামর্শ প্রদান। যদি ঘোষিত সময় অনুযায়ী আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে কয়েক মাস মাত্র সময় বাকী আছে। এ কারণে এ জনপদে আগমণ ঘটতে শুরু করেছে রাজনৈতিক দলের পরিচিত-কমপরিচিত এমনকি অপরিচিত নেতৃবৃন্দের। একটা উদাহরনের মাধ্যমে বিষয়টি তুলে ধরলে বুঝতে একটু সহজ হবে। অনেক কুৎসিত-কদাকর কোকিল বসন্তের আগমনের সাথে-সাথে কুহু-কুহু-কুহু সু-মধুর ডাকের মাধ্যমে তাদের আগমণ বার্তা জানিয়ে দেয়। তার সেই মিষ্টি মধুর ডাক প্রকৃতি প্রেমিক মানুষের হৃদয় ছুয়ে যায়। আর তাতে মুগ্ধ হয়ে অনেক নামী-দামী গুণি কবি-সাহিত্যিকদের লেখার ভাল উপকরণ তৈরী হয়ে যায়। এমনকি অনেক অ-কবিও কবিতা লিখে ফেলেন। লেখার অভ্যাস না থাকলেও অনেক প্রেমিক-প্রেমিকা তার প্রিয় মানুষটার জন্য দু’একটা গানও লিখে ফেলতে পারেন। কোকিল ভাই যেমন বসন্ত ঋতু আসলেই তাদের আগমণ বার্তা ওই কুহু-কুহু-কুহু’র মাধ্যমে জানান দেয়। ঠিক তেমনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ছাড়াও জনপ্রতিনিধি হবার খায়েসে-কালেভদ্রে ব্যক্তিগত প্রয়োজন ছাড়া মণিরামপুরের ত্রি-সীমানায় ছায়া দেখা যায় না-তাদের আগমনটা লক্ষনীয়। ঠিক কুৎসিত-কদাকর ওই বসন্তের কোকিল ভাইদের মত।
তাদের মধ্যে অনেকেই মণিরামপুরের সন্তান, এখানে তাদের জন্ম, কেটেছে শৈশব-কিশোর বয়সের সেই দুরান্ত জীবন। অনেকেই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকও এখানেই শেষ করেছেন। কিন্তু হলে কি হবে? রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে, এমনকি জেলা শহরের মধ্যেও থাকলে-প্রবাসির মত তাদের আগমণ ঘটে জন্মস্থান মণিরামপুরে। আর সেটা যে নিজেদের স্বার্থে সেটাও আর বুঝতে বাকী নেই জ্ঞানী-গুণি থেকে শুরু করে অতিসাধারণ জনতার। এক কথায় আগত জাতীয় সংসদকে কেন্দ্র করেই তাদের এই শুভ আগমণ।
দেশের অন্যাতম বৃহত্তম এ উপজেলাটির সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে যেমন গুরুত্ব রয়েছে-তেমনি নানা সমস্যায় জর্জরিত এটি। সমস্যা গুলোর মধ্যে অন্যাতম ভবদহের জলাবদ্ধতা। শুধু এই একটি মাত্র সমস্যায় মণিরামপুরের অর্ধাংশ ডুবে আছে পানির নিচে। এ সমস্যার আদৌ কি কোন সমাধান আছে? এ দুঃচিন্তা এখন মণিরামপুরবাসিকে কুরে-কুরে খাচ্ছে। কিন্তু ওই যে কোকিল নেতৃবৃন্দের এদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ আছে কি? মঞ্চে শুধু বড়-বড় বক্তব্য, ভবদহের কথা বলে রাজনৈতিক মাঠ গরম করে নিজেদের ফায়দা লুটার চেষ্টা করা ছাড়া আর কিছুই নয়। অর্থ্যাৎ, মণিরামপুরবাসির সমস্যার দিকে নজর বেশি না থাকলেও শীর্ষ জনপ্রতিনিধি হওয়ার স্বপ্নে বিভোর ওই বসন্তের কোকিলদের আনাগোনায় মণিরামপুর থাকে সবসময় সরগরম। ওই যে সোনার হরিণ তাদের চাই-ই-চাই। তো-চাই সেটা যে কোন মুল্যে। ওই যে, ‘তোরা যে-যা বলিস ভাই, আমার সোনার হরিণ চাই’। হোক না সেটা যোগ্যতা বা তোষামোদ, খেদমত অথবা চামচামি। সুতরাং-প্রিয় মণিরামপুরবাসি সাবধান, সাবধান, সাবধান।