✍️ তালুকদার লাভলী
> “মায়ের চোখে বাংলাদেশ”—এ শুধু একটি শ্লোগান নয়, এ এক আদর্শ রাষ্ট্রের নির্মাণস্বপ্ন।
“আমরা তেমন একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই, যেখানে দলমত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে, বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী কিংবা সংশয়বাদী—প্রত্যেক মানুষ নিরাপদে থাকবে।”
— তারেক রহমান,
এই একটি উচ্চারণ যেন ঝড় তুলেছে বিবেকবান হৃদয়ে। আমি কোনো রাজনৈতিক দলের অংশ নই, আমি একজন লেখক। আমার পরিচয় আমার কলম, যার প্রতিটি শব্দ ন্যায়ের দিকে ঝুঁকে পড়ে।
এই বক্তব্য, এই স্বপ্ন আমাকে গভীরভাবে স্পর্শ করেছে। শুধু আমাকে নয়, মানবিক চেতনায় উজ্জীবিত প্রতিটি মানুষকেই। সেই অনুভব থেকেই আমার এই বয়ান।
একটি মা যেমন—তেমনই হোক রাষ্ট্র
“একটি নিরাপদ মাতৃক্রোড়ই সন্তানের প্রথম রাষ্ট্র”—এই কথার অন্তর্নিহিত ব্যঞ্জনা এটাই বলে, নিরাপত্তা, শান্তি ও ভালোবাসাই হওয়া উচিত রাষ্ট্রের শিকড়।
‘মায়ের চোখে বাংলাদেশ’ কেবল আবেগ নয়, এটি একটি রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, একটি মানবিক রাষ্ট্রের স্বপ্ন—যেখানে ভালোবাসাই হবে শাসনের প্রেরণা, শ্রদ্ধাই হবে নীতির উৎস।
এই বাংলাদেশে পরিচয় নয়, মনুষ্যত্ব হবে মুখ্য। মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখার যে সহজ দর্শন, তা-ই হবে রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি।
বৈচিত্র্যে সৌন্দর্য, ভিন্নতায় শক্তি
সমাজ তখনই বিকশিত হয়, যখন তা নানা রঙে, নানা স্বরে গঠিত হয়।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর ভাষায়—
> “Diversity is the engine of invention. It generates creativity that enriches the world.”
আমাদের বাংলাদেশও হতে পারে এমন এক রঙধনু, যেখানে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, পাহাড়ি, বাঙালি, আদিবাসী—সবাই সমানভাবে স্নেহের পরশ পাবে।
কেউ সংখ্যালঘু নয়, সবাই রাষ্ট্রের আপন সন্তান—এই চেতনায় গড়ে উঠুক আগামীর বাংলাদেশ।
বিশ্বাস-অবিশ্বাসের ব্যবধান ঘুচুক সংলাপে
একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র তখনই পরিপূর্ণ হয়, যখন তাতে সন্দেহ, সংশয় এবং ভিন্নমত প্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকে।
বিশ্বাসী, অবিশ্বাসী কিংবা সংশয়বাদী—সবাই যখন নিজের মত প্রকাশ করতে পারে, তখনই সমাজ হয় প্রাণবন্ত।
আমর্ত্য সেন বলেন—
> “Without the freedom to think, democracy becomes merely a skeleton of its true form.”
তাই দরকার এমন পাঠক্রম, যেখানে কেবল ইতিহাস শেখানো হবে না, শেখানো হবে যুক্তির সৌন্দর্য, সহনশীলতার মর্যাদা এবং ভালোবাসার রাজনৈতিক দীক্ষা।
নিরাপত্তা মানে শুধু কাঁটাতার নয়
নিরাপত্তা মানে শুধু সীমান্তে পাহারা নয়, বরং নাগরিক জীবনের প্রতিটি কোণায় শান্তি ও মর্যাদার নিশ্চয়তা।
যখন একজন নারী গভীর রাতে নির্ভয়ে পথে হাঁটতে পারেন, একজন কৃষক জমির ফলের সঠিক মূল্য পান, কিংবা এক শিক্ষার্থী অবাধে প্রশ্ন করতে পারে—তখনই নিরাপত্তা সত্যিকার অর্থে প্রতিষ্ঠিত হয়।
এই ধরনের নিরাপত্তা আমাদের রাষ্ট্রকে মায়ের মতো করে তোলে—যেখানে আশ্রয় মেলে, অথচ দমন নয়।
শিক্ষা হবে আলোকের প্রদীপ, মানবিকতার ছায়াতল
জার্মান দার্শনিক ইমানুয়েল কান্ট লিখেছিলেন—
> “Enlightenment is man’s emergence from his self-imposed immaturity.”
আমরা এমন শিক্ষা চাই, যা আমাদের কেবল চাকরি দেবে না, মানুষ করে গড়ে তুলবে।
একটি শিশু যখন বলে—”মা, অন্য ধর্মের উৎসবেও আমি আনন্দ করতে চাই”, তখন সে কেবল মানবিক হয় না, রাষ্ট্রকে আরও বৃহৎ করে তোলে।
একজন শিক্ষার্থী যখন বলে—”আমার পেশা নয়, সমাজই আমার দায়িত্ব”, তখন গড়ে ওঠে আগামীর বাংলাদেশ।
‘মায়ের চোখে’—শুধু আবেগ নয়, ভবিষ্যতের দিশা
রাষ্ট্র মানেই শুধু সংবিধান নয়, রাষ্ট্র মানে—দায়িত্ববোধ।
একজন মা যেমন সন্তানের ভুলকে শুধরে দেন ভালোবাসা দিয়ে, তেমনি রাষ্ট্রকেও হতে হবে সংশোধনক্ষম, দয়ালু, মানবিক ও সহনশীল।
এই বাংলাদেশে আমরা চাই—
শিশু স্বপ্ন দেখতে ভয় না পায়,
তরুণ কবিরা কলম থামাতে বাধ্য না হয়,
কোনো ধর্ম, বর্ণ বা মতবাদ মানুষকে পর করে না তোলে।
সন্তানের হাসিমুখই রাষ্ট্রের সাফল্য
‘মায়ের চোখে বাংলাদেশ’—এই একটিমাত্র দর্শনের ভেতরে লুকিয়ে আছে সব সমাধান।
রাষ্ট্র যদি সত্যিই মা হয়ে ওঠে, তাহলে বৈষম্য, নিপীড়ন, অসহিষ্ণুতা আর ঠাঁই পাবে না এই ভূমিতে।
বাংলাদেশ হোক সেই জায়গা— যেখানে প্রতিটি মানুষ সম্মান নিয়ে বাঁচে,
প্রতিটি স্বপ্ন ডানা মেলে উড়ে যায় আকাশে,
প্রতিটি চোখে থাকে বিশ্বাসের দীপ্তি।
আর মায়ের চোখে প্রতিটি সন্তানের হাসিমুখ—হোক রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বিজয়।
—
🖋️ লেখক পরিচিতি:
তালুকদার লাভলী একজন কথাসাহিত্যিক, সমাজমনস্ক লেখক ও সংস্কৃতি-কর্মী।