মিরু হাসান, স্টাফ রিপোর্টার
বৃদ্ধা মাকে জীবনের জন্য হুমকিস্বরুপ দাবি করে বাড়িতে ঢুকতে বাঁধা দেওয়ায় সেই ছেলেসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে থানা পুলিশ।
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) বেলা ১২টার দিকে গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে সোমবার ১৪ জুলাই নওগাঁ শহরের কাজীর মোড় এলাকায় স্বামীর রেখে যাওয়া বাড়িতে ঢুকতে গিয়েছিলেন ৭০ বছরের একা বৃদ্ধা। ৫ ঘন্টা অপেক্ষা করেও ঢুকতে পারেননি তিনি। অভিযোগ বসতবাড়ির ওই সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে নিজের বৃদ্ধা মাকে বাড়িতে ঢুকতে বাধা দিয়েছেন ছেলে জুমাতুল এম ইসলাম সৌরভ।
আর বাড়িতে ঢুকতে না পেরে নিজের একমাত্র ছেলের বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ তুলে বাড়ির গেটের সামনে ধরনায় বসেছিলেন বিলকিস আক্তার নামে ওই বৃদ্ধা মা।
অপরদিকে ছেলে তিনি আমার জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ। তাই তাকে বাড়িতে ঢুকতে দিচ্ছি না। তিনি বাড়িতে থাকলে আবারও পারিবারিক কলহ ও মারামারি হতে পারে। যার কারণে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
মা যাতে ঘরে ঢুকতে না পারেন, সে জন্য বাড়ির সিড়িতে লোহার ফটকে তালা দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত ওই ছেলে জুমাতুল এম ইসলাম সৌরভ (৩২) কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সেই সাথে হামলা ও মারামারির ঘটনায় জড়িত থাকায় শহরের চকদেব এলাকার মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে মোহাম্মদ খোকন (৪৫) এবং শহরের কাজীর মোড় এলাকার চান্দুর ছেলে নাহিদ ইসলাম (৩৫) কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে নওগাঁ সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, বৃদ্ধ মা’কে বাড়িতে প্রবেশ করতে বাধা দেয় তার ছেলে সৌরভ এবং ছেলের বন্ধুরা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। পুলিশ তাদের দুই পক্ষকেই আলোচনার জন্য থানায় নিয়ে আসে। আলোচনা চলা অবস্থায় সৌরভ তার মায়ের সঙ্গে দুর্ব্যবহার এবং মারধর করতে চায়। পুলিশ তখন তাকে আটক করে। বৃদ্ধা ওই মা কয়েকজনকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করলে অভিযুক্তদের গতকাল রাতে গ্রেপ্তার করা হয়। মঙ্গলবার তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
জানা যায়, বৃদ্ধা বিলকিস আক্তারের এক ছেলে ও দুই মেয়ে। ছোট মেয়ে কানাডায় থাকেন। শহরের কাজীর মোড়ে বিলকিস আক্তারের স্বামী নিজের ১০ শতক জমির ওপর প্রায় ৩০ বছর আগে দুই তলা বাড়িটি নির্মাণ করেন। ওই বাড়ির দুতলার একটি ফ্লাটে তিনি বসবাস করে আসছিলেন।
সোমবার বেলা ১১ টার দিকে মেয়ের বাড়ী থেকে নিজের বাড়িতে আসতে চাইলে প্রবেশে বাধা দেন তার ছেলে। পরে সিড়ির পাশেই বিকেল ৫টা পর্যন্ত বসে ছিলেন বৃদ্ধা ওই মা।
ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়লে ওই বাড়িতে বিকেলে গণমাধ্যম এবং মানবাধিকার সংগঠনের কর্মীরা যায়। গণমাধ্যম এবং মানবাধিকার সংগঠনের কর্মীদের সামনেই মা এবং ছেলের পক্ষে লোকজনের মধ্যে হাতাহাতি এবং সংঘর্ষ হয়। পরবর্তীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এসে দুই পক্ষকেই থানায় আলোচনার জন্য নিয়ে যায়। এরপর তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
বিলকিস আক্তার বলেন আমার স্বামী এই বাড়ি করেছেন। এটা আমার স্বামীর স্মৃতি। জীবনের বাকিটা সময় এই বাড়িতে কাটাতে চাই। এই বাড়িতে আমার মালিকানা কম বলে ছেলে এর আগেও কটাক্ষ করেছে। মেয়েরা আমার অপমান সইতে না পেরে তাদের অংশ আমাকে লিখে দিয়েছে। এই বাড়িতে কাগজে-কলমে আমার অংশই বেশি। কিন্তু আমার ছেলে পুরো সম্পত্তি হাত করার জন্য আমাকে বাড়িতে ঢুকতে দিতে চায় না।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে ওই বৃদ্ধার স্বামীর মৃত্যুর পর বসতবাড়ির জমি নিয়ে ছেলে জুমাতুল এম ইসলাম সৌরভের সঙ্গে মা বিলকিস আক্তারের বিরোধ সৃষ্টি হয়। স্বামীর মৃত্যুর পর আইন অনুযায়ী বিলকিস আক্তার ও তার তিন সন্তান ওই বসতবাড়ির অংশীদার হন। কিন্তু বসতবাড়ির পুরো সম্পত্তি দেওয়ার জন্য সৌরভ তার মা’কে চাপ দিতে থাকেন। কিন্তু মা ও বোনেরা তাকে বসতবাড়ির জমি লিখে দিতে রাজি না হওয়ায় পারিবারিক বিরোধ দেখা দেয়। ছেলের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় বিলকিস আক্তার ২০২১ সাল থেকে অধিকাংশ সময় নওগাঁ শহরেই বড় মেয়ের বাড়িতে থাকছেন।##